তালতলী পর্যটন কেন্দ্র

সুধী
আস্সালামু আলাইকুম।
আমরা অনেক সময় দূরের দৃশ্য দেখার জন্য ভ্রমণে বের হই। অথচ, আমাদের চারদিকে অনেক নৈসর্গিক দৃশ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, তা সবার দৃষ্টিতে ধরা পরে না। বিভাগীয় বরিশাল শহর থেকে দু’ কিলোমিটার দুরত্বে “তালতলী নদী” নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অনিন্দ্য অপরুপ আধারে বেষ্টিত এ নদীটি বরিশাল নগরীর কয়েক লক্ষ মানুষ চিত্ত বিনোদরেন সুযোগ পেতে পারেন। বন্দী নগরবাসীর একটু মুক্ত আলো বাতাস আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের সকল সুযোগ রয়েছে এখানে। পর্যটকদের যা কিছু প্রয়োজন সব কিছুই প্রকৃতি অকৃপনভাবে ঢেলে দিয়েছে। আর এ জন্যে প্রয়োজন পর্যটকদের নিরাপদ আশ্রায়ণ গঠন করা। একটু নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা এবং একটু গুছিয়ে নেয়া মাত্র। তালতলী পর্যটন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হলে এ এলাকার ইতিহাস-ঐতিহ্যের উন্নয়নে ইতিবাচক অবদান রাখবে। সরকারি, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, এনজিও বে-সরকারি সংস্থা, সমাজ সেবক ও ব্যক্তি উদ্যোক্তাগণকে এ পর্যটন কেন্দ্রে বিনিয়োগ করার সহায়তা নিমিত্তে সাদর আহবাস জানানো গেল। চরবাড়িয়া শায়েস্তাবাদ ও চাঁদপাশা ইউনিয়নের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও জনপ্রতিনিধিসহ ২৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি পর্যটন কেন্দ্র বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তালতলী বাজারে একটি অস্থায়ী কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

ইতিহাস ও ঐতিহ্যঃ

১। তালতলী নদীটির দু’মাথায় চর জেগে লেকে পরিণত হয়েছে।

২। দু’তীরে প্রায় ১০ কিঃ মিঃ বেড়িবাঁধ নির্মাণ হওয়ায় প্রচুর বৃক্ষরাজী আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর।

৩। লেকের উত্তর পারে বিরাট চরে দৃষ্টি নন্দন পার্কসহ দর্শনীয় স্থান নির্মাণ করা সম্ভব।

৪। বিনোদনে নিরাপদে নৌকা ভ্রমণ করা যেতে পারে।

৫। মহান স্বধীনতা যুদ্ধে হানাদার পাক বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধের রনাঙ্গণ এ নদীটি। এ যুদ্ধে নদীর পূর্ব মাথায় ইরানী ও মাজভী নামে ২ টি বিরাট স্টীমার ডুবে যায় যেখানে স্মৃতি স্তম্ভ্য করে দর্শনীয় স্থান করা সম্ভব।

৬। যুদ্ধে ৪৭ জন শহীদদের “নামের স্মৃতি ফলক” স্থাপন করা হয়েছে তালতলী বাজারে। স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এ তথ্যটি পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

৭। তালতলী ব্রীজটির উপর দাঁড়িয়ে সহজেই সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের মনোরম দৃশ্যে বিমোহিত হওয়া সম্ভব।

৮। তালতলী নদীতে ব্যাপক ভিত্তিতে মৎস চাষ প্রকল্প গড়ে তোলা যেতে পারে, মৎস চাষের অভয়াশ্রম হতে পারে মৎস শিকারীদের (শিপ বড়শী) মিলন ক্ষেত্র।

৯। প্রবীণ দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক আরজ আরী মাতুব্বরের জন্ম তালতলী নদীর তীরবর্তী লমাচরী গ্রামে। আরজ মঞ্জিল লাইব্রেরী ও সমাধী-তার স্মৃতি বহন করছে যা দেশ-বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষনীয় ও অনুপ্রাণিত করতে সক্ষম।

১০। দেশ বরেণ্য কবি সুফিয়া কামাল. সাবেক রাষ্ট্রপতি আঃ রহমান বিশ্বাস, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ডঃ কামাল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুলহক সহ শায়েস্তাবাদ নবাবদের স্মৃতি বিজরিত লীলাভূমি এ দ্বীপটি ঘুরে দেখার এক অপূর্ব পলব্ধির স্থান।

১১। ঝুনাহারে ১০/১২ টি নদীর সংযোগ স্থানে অসংখ জেগে উঠা বৈচিত্রময় লীলাভূমি চরগুলো। যা প্রকৃতিক দৃশ্যে ভরপুর, এখানে বিভিন্ন জাতের বিভিন্ন পাখির সমারোহ সচক্ষে দেখা আকর্ষনীয় বটে।

১২। বিভিন্ন লঞ্চ, স্টীমার, সম্পান, ট্রলার, কার্গো ও পালতোলা নৌকার দৃশ্যগুলো এখান থেকে দেখা যায়, যা দেখে ভ্রমণ প্রিয় মানুষ মুগ্ধ হতে বাধ্য। বর্তমানে নগরী থেকে তালতলী পর্যন্ত বাস, টেম্পুর লাইন হওয়ায় দর্শনার্থী ও ভ্রমণাকারীদের জন্য নিরাপদ যাতায়াতের সু-ব্যবস্থা রয়েছে।

গুগল ম্যাপে অবস্থান