দেশপ্রেমিক আত্মপ্রত্যয়ী, অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, তিরিশ লাখ শহীদদের রক্ত এবং দুই লাখ মা-বোনদের ইজ্জ্বতের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। স্বাধীনতার জন্য জীবনদানকারী শহীদদের জাতি আজীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের বীরত্তগাথা সংরক্ষণে সহায়ক ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে দীর্ঘ ৩৮ বছর পরে বীরশ্রেষ্ঠদের নামে তাঁদের নিজ নিজ গ্রামে স্থায়ী স্মৃতি স্মারক হিসেবে গ্রন্থগার ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মান জাতীয় ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সরকারের এহেন উদ্যোগের পাশাপাশি সম্পূর্ণ বেসরকারীভাবে পরিবারের নিজস্ব উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে ‘শহীদ আবদুর রহমান খান স্মৃতি পাঠাগার’। আত্মত্যাগী এ মহান শহীদের স্মৃতিকে চিরঞ্জীব করার জন্য এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে স্মরণীয় করে রাখতে এ পাঠাগার অবদান রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এ প্রতিষ্ঠান আগামী প্রজন্মকে আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের আত্মত্যাগ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কে ধারণা প্রদানে সক্ষম হবে। 
 
বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলার একটি জনপদ। চরবাড়িয়া ঐশ্বর্য ও বীর্যবান দেশপ্রেমিক সাধারণ বাসিন্দারা ২৫ এপ্রিল ১৯৭১ সনে স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবন দিয়ে রক্ত দিয়ে রেখে গেছে স্বাধীনতার ইতিহাসে গ্রামীন জনপদের নতুন অবদান। ঐ দিন সম্মুখ যুদ্ধে ৪৭ জন শহীদ হয়েছেন এবং ২৫ জন আহত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে চরবাড়িয়ার জনগণের প্রচুর রক্ত, ধন-জন-জীবন কেঁড়ে নিয়েছে। এখনো অনেক বীরঙ্গণা করুণ কাহিনীর স্বাক্ষী লুকিয়ে আছে এ চরবাড়িয়ায়।
 
চরবাড়িয়া শহীদদের আত্মত্যাগ ক্ষুদ্রাকারে গণ্য করার কোন অবকাশ নেই। সুবিশাল মহিমায় নির্মল ইতিহাসের পাতায় তা স্থান করে নিয়েছে অবলীলায়। সে সময়ের সহজ সরল জীবন যাপনের এই মানুষগুলো হয়তো আর কোন দিনই জানতে পারবে না আগামী প্রজন্ম তাঁদের জন্য কি গৌরব বরণডালা সাজিয়ে নিয়ে স্বশ্রদ্ধায় দাঁড়িয়ে আছে।  
 
মুক্তমনের চর্চা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এ এলাকার শিশু-কিশোর, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা তাদের নির্মল চরিত্র, সুন্দর মন আর সুস্থ্য দেহের অধিকারীরূপে গড়ে তোলার সুযোগ পাবে এ পাঠাগারের মাধ্যমে। 
 
জ্ঞান অর্জন না করে নিজেকে জানা যায় না। সৃষ্টিতত্ত্ব বোঝা যায় না। আল্লাহতায়ালাকে চেনা যায় না। ক্ষমতাধর হওয়া যায় না এবং নেতৃত্ব দেয়া যায় না। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় মুসলমানরা ছিল সর্বেসর্বা। কোরআনের পাশাপাশি তারা জ্ঞান-বিজ্ঞান বিষয়ক সব ধরণের বই পড়েছে, গবেষণা করেছে। তারা আল্লাহতায়লার সৃষ্ট প্রকৃতির নির্দেশাবলির ওপর গবেষণার মাধ্যমে সত্য উপলব্ধি করেছে। আত্মশুদ্ধি ঘটিয়েছে। যাবতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই পড়েছে এবং বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার শিক্ষা গ্রহণ করেছে। 
দেশে সুশিক্ষার রাজত্ব গড়ে উঠলে অবক্ষয় ও বিপথগামিতা থেকে তরুন-তরুণীরা রক্ষা পাবে। পড়াশোনা ও জ্ঞানচর্চার দিকে ছাত্রসমাজকে ধাবিত করে শিক্ষার প্রসার নিশ্চিত করতে হবে। জ্ঞানচর্চা ও চরিত্র গঠনের পাঠশালা হিসেবে দেশের প্রতি অঞ্চলে পাঠাগার গড়ে তোলা প্রয়োজন।  নৈতিকতা ও মূল্যবোধে শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত করতে পাঠাগারই হতে পারে উজ্জল বাতিঘর। 
শিক্ষা ও সংস্কৃতিক লালন ক্ষেত্র শের-ই-বাংলা এ.কে ফজলুল হক, জীবনানন্দ দাস, অশ্বিনী কুমার দত্ত, মুকুন্দদাস, বেগম সুফিযা কামাল ও আরজ আলী মাতুব্বর এর স্মৃতি বিজড়িত প্রাচীন জনপদ চন্দ্রদ্বীপের কীর্তনখোলা ও উহার শাখা তালতলী নদীর তীরে চরবাড়ীয়া বাংলার একটি জনপদ। চরবাড়ীয়ায় যুগে যুগে জন্ম নিয়েছে অনেক কৃতীমান মানব সন্তান। 
স্বাধীনতা অর্জনের দীর্ঘ দিন পরে চরবাড়িয়ার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ  মুক্ত মনের চর্চা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এ এলাকায় অধিকতর শিক্ষা বিস্তর, জ্ঞান অর্জন এবং পরিশুদ্ধ জীবন চেতনা সুমহান লক্ষ্যকে সামনে রেখে  ‘শহীদ আবদুর রহমান খান স্মৃতি পাঠাগার” ০১-০৬-২০০৭ খ্রিঃ প্রতিষ্ঠা করেন।
পাঠাগারটি দেশের অজ্ঞতা দূর করার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে। গ্রামের সাধারণ লোকের পক্ষে তার প্রয়োজন মত সকল বই কিনে তার জ্ঞান ভান্ডার পূর্ণ করা সম্ভব নয়। এ পাঠাগার হতে পারে পল্লীবাসির ও দরিদ্র মানুষের চিত্তবিনোদনের প্রধান কেন্দ্র। যারা অর্থ খরচ করে সংবাদ পত্র কিনতে পারে না তারা এ পাঠাগারে এসে দেশ-বিদেশের সংবাদ এবং প্রয়োজন মত বই পুস্তক অনায়াসে পাঠ করতে পারবেন। তাই পাঠাগার মানব কল্যাণ ও উন্নতির পরম সম্পদ এবং জাতীর মেরুদন্ড।

শহীদ আবদুর রহমান খান স্মৃতি পাঠাগার এর দুইটি স্মারক সংখ্যা

পাঠাগার-2014

শহীদ আবদুর রহমান খান স্মৃতি পাঠাগার স্মারক সংখ্যা ২০১৪

পাঠাগার-2021

শহীদ আবদুর রহমান খান স্মৃতি পাঠাগার
৭ম দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা ২০২১